পর্যটন শিল্প এখন রমরমা। দেশে তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের হোটেল-মোটেল। বাড়ছে দক্ষ কর্মীর চাহিদা। দেশের বাইরেও আছে লোভনীয় চাকরির হাতছানি। তাই এইচএসসি পাসের পর ভর্তি হতে পারেন হোটেল ম্যানেজমেন্টে। পর্যটন বিষয়ে পড়তে চাইলে এইচএসসি পাস এবং ভালো ইংরেজি বলায় পটু হতে হবে। সৌন্দর্যের চেয়ে এখানে ভালো কাজ জানাটাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে তারকা হোটেলগুলোর কিছু কিছু বিভাগে শারীরিক গঠনকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
হোটেল ও ট্যুরিজম পেশার দায়িত্ব
এখনকার পাঁচতারা হোটেল মানেই যেন একটা ছোটখাটো শহর। গোটা ছয় রেস্তোরাঁ ২৪ ঘণ্টা খোলা, কফিশপ, কনফেকশনারি, সুইমিং পুল, ডিস্কো, কনফারেন্স রুম, বুটিক, টেনিস কোট কিছুই বাদ নেই। তাই এসব হোটেল চালাতে গেলে প্রয়োজন পেশাদার কর্মীর। কারণ একটি আধুনিক পাঁচতারা হোটেলে বেশকিছু বিভাগ থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, হাউস কিপিং, পাবলিক রিলেশন, মার্কেটিং, ফিনানশিয়াল ম্যানেজমেন্ট, হোটেলের ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজমেন্টসহ সব জায়গায় হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাস করা ছাত্র-ছাত্রীদের কদর।
পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ
সর্ব প্রথম ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পাঠদান শুরু হওয়ার পর অনেক সরকারি ও বেসরকারিসহ একাধিক ট্রেনিং সেন্টারে এ বিষয়ে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।চারবছর মেয়াদি অনার্স কোর্সের জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইবাইস ইউনিভার্সিটি ও ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটিসহ গুটিকয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়ানো হয়। এছাড়া ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, মহাখালী। বাংলাদেশ হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইন্সস্টিটিউট, গ্রিনরোড, ঢাকা। পূর্বাণী ইন্টারন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট, দিলকুশা, মতিঝিল। হোটেল রাজমনি ঈশা খাঁ, কাকরাইলসহ আরও অনেক জায়গায় ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্টে পড়াশোনা করা ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
যেসব বিষয়ের চাহিদা বেশি
হোটেল ম্যানেজমেন্ট শুধু একটি বিষয় নয়। এর মধ্যে বেশ কিছু বিষয় রয়েছে। যেমন_ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন, ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম, হাউসকিপিং, বেকারি অ্যান্ড পেস্ট্রি প্রোডাকশন, ফ্রন্ট অফিস সেক্রেটারিয়াল অপারেশন ইত্যাদি। এসব বিষয়ে ছয় মাসের শর্ট কোর্স এবং এক বছর, দুই বছর কিংবা তিন বছরের ডিপ্লোমা কোর্স রয়েছে। আর স্নাতক কোর্স তো আছেই। চাহিদামতো যেকোনো একটি কোর্স করতে পারেন। দীর্ঘমেয়াদি কোর্সগুলো চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশি গ্রহণযোগ্য। চাকরির ক্ষেত্রে চাহিদা বেশি এমন ছয়টি বিষয়ের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো
ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সার্ভিস : খাবার তৈরি, টেবিল সাজানো, খাদ্য ও পানীয় পরিবেশন, পানীয় ও খাদ্যতালিকা হাইজিন অ্যান্ড স্যানিটেশন ইত্যাদি বিষয় কোর্সের অন্তর্ভুক্ত।
ফুড অ্যান্ড বেভারেজ প্রোডাকশন : এই কোর্সের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো হলো বাংলাদেশি, চায়নিজ, ইউরোপিয়ান, ইন্ডিয়ান খাবার তৈরি প্রণালী, ডেকোরেশন, হাইজিন অ্যান্ড স্যানিটেশন।
ফ্রন্ট অফিস সেক্রেটারিয়াল অপারেশন : অভ্যর্থনা টেলিফোন ম্যানার্স, চেক ইন, চেক আউট, বিল সংরক্ষণ, হিসাব সংরক্ষণ, রেকর্ড সংরক্ষণ ও কম্পিউটারসংক্রান্ত বিষয়গুলো শিখবেন এ কোর্সে।
সার্টিফিকেট কোর্স ইন হাউসকিপিং অ্যান্ড লন্ড্রি : কক্ষসজ্জা, বেড তৈরি, ক্লিনিং, লন্ড্রি সার্ভিস, হাইজিন অ্যান্ড স্যানিটেশন, ফাস্ট এইড ইত্যাদি এ কোর্সের অন্তর্ভুক্ত।
বেকারি অ্যান্ড পেস্ট্রি প্রোডাকশন : এই কোর্সে শিখবেন কেক, পেস্ট্রি, ব্রেড, কুকিজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ডেজার্ট আইটেম প্রস্তুত, ডেকোরেশন, হাইজিন অ্যান্ড স্যানিটেশনের মতো বিষয়গুলো।
ট্রাভেল এজেন্সি অ্যান্ড ট্যুর অপারেশন : এয়ারলাইন্স, ট্রাভেল এজেন্সি ও ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য এখানে শিখবেন ট্যুর অপারেশন্স অ্যান্ড ট্যুর গাইডিং, ট্রাভেল সার্ভিস, ট্রাভেল ও কালচারাল জিওগ্রাফি বিষয়গুলো।
ভর্তির যোগ্যতা
এ বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে আপনাকে প্রথমে এইচএসসি পাস করতে হবে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে চাইলে গ ইউনিটের অধীনে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। কারণ এখানে এটি ব্যবসা অনুষদের বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য এইচএসসিতে যে কোনো বিভাগ থাকলে চলবে।
পড়াশোনার খরচ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার খরচ একেবারেই কম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মুজিব উদ্দিন আহমেদ জানান, এখানে চার বছরে খরচ পড়বে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মতো। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানভেদে খরচ পড়বে ৪ থেকে ৬ লাখ টাকার মতো। এছাড়া ২ বছর অথবা ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য প্রতিষ্ঠানভেদে আপনাকে গুনতে হবে ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত।
বিদেশে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, পোল্যান্ড, সাইপ্রাসসহ বিভিন্ন দেশে ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমে পড়াশোনাসহ গ্র্যাজুয়েশন করার সুযোগ রয়েছে। পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভর করে এসব দেশে গড়ে উঠেছে প্রচুর হোটেল রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট, ট্যুর কোম্পানি ও ট্রাভেল এজেন্সি। এসব দেশে এখনও দক্ষ পেশাজীবীর প্রচুর চাহিদা। এখনও পড়াশোনা এবং প্রশিক্ষণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল শিক্ষার পাশাপাশি ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমে কাজ করার অফুরন্ত সুযোগ। তাই এসব দেশে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী যাচ্ছে। আপনিও চাইলে প্রয়োজনীও শর্ত পূরণ করে যেতে পারেন এসব দেশে। আমাদের স্বপ্নের এ বাংলাদেশে ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্টে ক্যারিয়ার দিন দিন বাড়ছে। আমাদের এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে আপনিও পারেন অবদান রাখতে।
বিশেষজ্ঞের অভিমত
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুজিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি নতুন হলেও সমাজে ও কর্মক্ষেত্রে এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় এর প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। এখানে যেমন রয়েছে পর্যাপ্ত বেতন ও সুযোগ-সুবিধা।
বেতন কেমন
প্রতিষ্ঠান ও কাজভেদে বেতন কাঠামো ভিন্ন হয়। ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্নকারীরা কাজ শুরু করতে হবে শিক্ষানবিশ হিসেবে। এ সময় তারকা হোটেলগুলো থেকে যাতায়াত ভাড়া বাবদ কিছু টাকা দেওয়া হয়। তবে সব হোটেলে একই রকম নিয়ম নেই। শিক্ষানবিশ শেষে শুরুতে বেতন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা হয়ে থাকে। অভিজ্ঞদের বেতন ৩৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। এ ছাড়া কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে লভ্যাংশের একটা অংশও কর্মচারীদের দেওয়া হয়।
[[[ হয়তো অনেক তথ্য অসম্পূর্ন; আশা করি আপনারা কমেন্টের মাধ্যমে তা সুধরে দিবেন। ভালো লাগলে শেয়ার ও কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের উৎসাহিত করুন। আপনার বন্ধুকে ‘
আমার লক্ষ্য’ সম্পর্কে বলুন। ]]]